ব্য তি রে ক

                   

  একটি অনিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা

                    ।। ১৩ তম বর্ষ ।।

  অনলাইন ২য় সংখ্যা ।। ১৫ই আগস্ট, ২০২০

horizontal line
horizontal line

              সম্পাদকঃ শুভদীপ মাইতি

          অনলাইন কারিগরি: ময়ূখ ঘোষ

                 প্রচ্ছদ: সুব্রত হালদার।

কাঁথি ।।পূর্ব মেদিনীপুর ।। প.ব. ।। ভারতবর্ষ ।।

কথা: ৯০০২৫৮৫৮৩২

ই-মেল: byatirekmagazine@gmail.com

horizontal lineযাদের কবিতায় সমৃদ্ধ এই সংখ্যা:

অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, কুন্তল  মুখোপাধ্যায়, তৈমুর খান, সুতনু হালদার, রবিন বণিক, সোমনাথ বেনিয়া, চন্দ্রদীপা সেনশর্মা, সুলেখা সরকার, উত্তম চৌধুরী, সুমন মল্লিক, বিরথ চন্দ্র মন্ডল, অঞ্জন দাস, পিন্টু পাল, জাতিস্মর, সৌরভ বর্ধন, শুভেন্দু ঘোড়াই (স্বপ্ননীল), সন্দীপন দাস।

horizontal line

অ য় ন  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়

পরিচিতি : অ য় ন  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়

পরিচিতি: অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বর্তমান ঠিকানা হুগলি জেলার রিষড়া শহরে। মূলতঃ কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও ছড়া এবং গদ্য সাহিত্যেও সমান আগ্রহ। প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯৯৫-তে ‘দেশ’ পত্রিকায়। প্রথম কবিতার বই  ২০০০ সালে। ‘কবিদানব’ কাব্যগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন ‘কৃত্তিবাস’ পুরস্কার’। ভারত সরকারের সংস্কৃতি-মন্ত্রকের অধীনে ‘জুনিয়ার ফেলোশিপ’ পেয়ে গবেষণা করেছেন বাংলা কবিতা নিয়ে। সাহিত্য অকাদেমির আমন্ত্রণে কমনওয়েলথ রাইটার্স ফেস্টিভ্যালে বাংলা ভাষার প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন ২০১০ এ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে যুক্ত। এই পত্রিকার সহ সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেছেন কিছুকাল। 

কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা- আট। ‘বউ পদাবলী’ কাব্যগ্রন্থের জন্য বাংলা কবিতা আকাদেমি প্রবর্তিত তুষার রায় সম্মাননা পেয়েছেন এ’বছর।

ছোটগল্প লিখেছেন ‘কালি ও কলম’, ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’, ‘নবকল্লোল’, ‘মাসিক বসুমতী’, ‘অদ্বিতীয়া’ সহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। নিজের লেখা ছড়ার বই ছাড়াও সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থের।

ভালোবাসেন সিনেমা ও ক্রিকেটের স্বাদ নিতে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ 

প্রত্ন

শতাব্দী-প্রাচীন অবসন্নতায় বডি ফেলে দেব…

সবুজ-রঙের-জলে অবাধ নিশ্চিন্ত বিশ্রাম…

সম্মোহিত হয়ে আছি― আচম্বিতে ছুঁয়ে দিলে কে গো?…

কোথায় দেখেছি কিছুতেই মনে আসছেনা নাম…

প্রত্যাশার দশকে মুখ ফিরিয়ে ছিলে? সামনে আসেনি?…

মার খেতে-খেতে অসহায় ইতিউতি খুঁজে গেছি…

ভূগর্ভের নীচে সে’ অনাবিষ্কৃত সম্পদের খনি―

খুঁড়তে খুঁড়তে পাওয়া গেছে, লোকমুখে সন্দেশ পেয়েছি…

প্রতীক্ষিত জহরত হাতে শত মন্নতের শেষে…

এখন তা নিয়ে বলো করব কী! রাখব? দেব ফেলে?

ক্ষতচিহ্ন বুকে জাগা মৃত সভ্যতার এক দেশে

সবুজ-বিস্মৃতি উড়ছে জোনাকির-চোখ জ্বেলে জ্বেলে…

স্নায়ুকোষে ভরা গত শতকের বিষ-বিপন্নতা…

বড়ো অসময়ে এলে… দ্যাখো, প’ড়ে শুধু নির্জনতা

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

অ-চেতন

চোখ বন্ধ করো, মিডিয়াম

চোখ খোলো, ভেতরের…

আলতো হাত রাখো

আর একটু পরেই এই তেপায়া টেবিল কাঁপতে শুরু করবে

তোমার ছুড়ে-দেওয়া ওয়েভ-লেন্হ

ঝটপট করতে করতে শূন্যে উড়ছে…

ঘর ভর্তি অন্ধকারের জমাট টুকরো

বুকের কৃশশিখা একবার দুলে উঠে উবে গেল

শুনতে পাচ্ছো?

খটখট… খটখট… খটখট…

মিডিয়াম, শুনতে পাচ্ছো?

জানালায় জানালায় ধকধক

কিছু এসেছে…

মিডিয়াম, চোখ খুলো না

এই হল সেই সময়

যখন তোমার ভিতর আমি ঝপ ক’রে ঢুকে পড়ব

আর বন্ধ দরজার তলা দিয়ে চুঁইয়ে চুঁইয়ে বেরিয়ে আসবে

কালো প্ল্যানচেট…

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

অবচেতন

সমস্ত ঘর জুড়ে একটা তেপায়া টেবিল

এলোমেলো হেঁটে বেড়াচ্ছে

এখন কোনও হাওয়া বাতাস নেই

ভেন্টিলেটরের নিশ্বাসও স্থির

খুব আলতো আওয়াজ হল… পায়ের…

মিডিয়াম, ছিটকিনি খুলে দাও

আমাকে শুনতে পাচ্ছো, মিডিয়াম?

দরজা খুলে দাও

এই টেবিল স্পর্শ ক’রে তুমি কাকে ডেকেছো?

যার আসার কথা ছিল

সে তো আসেনি!

অন্য কারোকে পাঠিয়ে দিয়েছে

ঐ, ধাক্কা পড়ল আবার…

দ‍রজা খুলে দাও মিডিয়াম

আমি এসে গেছি…

horizontal line

কু ন্ত ল  মু খো পা ধ্যা য় 

প্রলাপ

তুমি যে দূরের আলো মাঝে মাঝে ভুলে যাই , ভুলে গিয়ে খুলে ফেলি মন , তুমি চলে যাও অন্য সন্ধ্যের আকাশের দিকে যেখানে নীল আকাশ পিছনে নিয়ে জ্বলে উঠছে রুগ্ণ আলো , আলোগুলি ।আমার কথা তুমি নিতে পারো না । তোমাকে আগেও চিনতাম না , চিনতে পারি না আজও । তাই উপরের কথাগুলো ভুলে গিয়ে বারবার নিজের মতিচ্ছন্নতার দিকে ফিরে আসি । আমি তো  ভালো ছিলাম না কখনও , আজও নই । শুধু দূরের আলো দেখলে আজকাল ভয় পাই । সরে দাঁড়াই । ধাক্কা খেতে খেতে ধাক্কা খেতে খেতেও তবু আমার একটা স্নেহের সম্পর্কের দিকে যেতে ভীষণ ইচ্ছে হয় । একটা নিটোল মাখামাখি প্রেমের গল্প চাই আমি । কোনও দিদি নেই আমার । তবু দিদি ও দিদি আমাকে টিলার উপরে নিয়ে চল। ভালোবাসা পাইনি সারাজীবন । আজ সূর্যাস্ত দেখি ভাইবোনে ।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

চরিত্রহীন

এইভাবে সবার ছবি দেখতে দেখতে আমি বুড়ো হয়ে যাবো । গভীর করে তোমাকে পাওয়া আর হল না আমার । অন্ধকার ঘরে কোন শূন্য থেকে আমার শব্দ আসে , তাকে আয়ুর মতো মনে হয় । আয়ুর মতো শব্দ চলে যায় । ফুল ফুটে ঝরে যায় , তার কোনো আফসোস নেই । শুধু মহাকাশের নীচে নীরব চিৎকারে আমি ফেটে পড়ি : বলো কেন নিয়ে নিলে ? কেন আর গভীর করে তোমাকে পাওয়া হল না আমার  । কেন গোপন দৃষ্টি দিয়ে কেউ আমার দিকে চেয়েও দেখে না । আমি কি উদাস হবো ? পরিযায়ী পাখির মতো কোনো দীঘির জলে সাঁতরে আসব? নাকি যেসব দীঘিরা রেলস্টেশনের পারে ঝুপড়ি বস্তিতে ডাকে ঝাঁপ দিতে , সেখানে যাব আমি ? খিদে আমার অমানুষিক খিদে হে ঈশ্বর এত খিদে দিয়ে আমাকে পাঠালে কেন পৃথিবীতে । অন্তত পাথর দাও শক্ত পাথর তাই খেয়ে একপেট শুয়ে থাকি আকাশের নীচে

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

লেখা

বাংলার কবি আপনার কবিতা নিয়ে লিখেছিলেন , আপনিও বুঝেছিলেন আর বুঝি প্রচারের দরকার নেই । কিন্তু এখন এই চার বৎসর পর কেউই যখন আপনাকে পাত্তা দেয় না ,আপনি মনে মনে সেই কবির লেখা বাক্যগুলো ভাবতে ভাবতে আত্মপ্রচারের দিকে নেমে গেলেন । ডিপ্লোম্যাসি এক আশ্চর্য প্রচার ওষুধ যা বাঙালিজীবন থেকে শিখে নিয়েছেন আপনি

কবিতা লিখতে এসে আপনি আসলে অনেককিছু চেয়েছিলেন । শ্রদ্ধা , সম্মান এইসবও তো অনেক কিছু ! সেই ফুলটি দেখেছিলেন তরুণবয়সে যে কোনও দেবতার পায়ে যায়নি । ফুল হয়ে উঠবার পর তার চন্দ্রকলা ক্রমে নিভে গিয়েছিল । মনে হয়েছিল ,প্রকৃতির মতো এমন উদাসীন হলেই সত্যিকারের ফুলের জন্ম দেওয়া যায় !

আপনি আমার কাছে তাই একটি স্যাম্পল । যা আমি কোনদিনও হয়ে উঠব না । আমি জানি প্রকৃতি মহাকবিতা লেখে খুব কম কিছু আয়োজন দিয়ে । সে তৈরি করে জলোছ্বাস , দিগন্তবিস্তৃত ঘন ও গভীর মেঘ । সে তৈরি করে পুরুষ ও নারী । খুব ছোট উপকরণ দিয়ে ।

আমার ভিতরেও আমি সেইসব উপাদান জমিয়ে রেখেছি । লুকোনো জলের শব্দের আওয়াজ , আকাশের নীলাভ বিস্তারের একটা টুকরো অথবা জঙ্গলের সবুজ অন্ধকারের রঙ । এইসব দিয়ে আমি একদিন মহাকবিতা লিখব , জানবেন । 

শুধু উদাসীন হতে হবে আমাকে ।

horizontal line

তৈ মু র  খা ন

পরিচিতি: জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭।

পড়াশোনা : বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি এবং প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা নিয়ে পি এইচ ডি প্রাপ্তি। 

পেশা : শিক্ষকতা । 

নব্বই দশকের কবি। প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থ ২০টি। প্রথম কাব্য: কোথায় পা রাখি(১৯৯৪)।

পুরস্কার : কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার ও দৌড় সাহিত্য সম্মান, নতুন গতি সাহিত্য , আলোক সরকার স্মারক পুরস্কার ইত্যাদি ।ঠিকানা :  রামরামপুর (শান্তিপাড়া), রামপুরহাট, বীরভূম, পিন ৭৩১২২৪, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। ফোন ৯৩৩২৯৯১২৫০

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ আপেল বাগান 

নরম অস্তিত্ব জুড়ে আপেল বাগান 

আদিম গ্রন্থের সাপ উঠে এলে 

তুমি আমি সেই বিকেলের কমলা ফুল 

বিবাহ বহির্ভূত দিন যাওয়া আসা করে 

যেমন সোনালি মূর্খ মাছ সূর্যাস্ত দ্যাখে 

অথবা প্রণয়জল ভেদ করে উড়ে যায় হাঁস 

কিছু ভাষা দুনিয়ার গাধাদের চোখে বসে থাকে 

মৃত্যুদন্ড শোনার পরও আলো বেশ চকচকে 

নীলাভ সৈনিকের তাড়নায় আর্কিমিডিসের 

যুগ কাঁপে 

অথবা গ্রীক হাম্বিরের চোখে লীলাময় অগ্নি 

দুইহাতে শূন্যের বিস্তার হয়ে চলে 

ইতিহাস ফসল ফলায় বেশ  । 

আপেলের গানে গানে সভ্যতা মোহিত হয় 

সকাল সকাল কাক ভরে যায় উঠোনে…

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ খড় 

আমার উদ্দেশ্যগুলি খড় শুকিয়ে নেয় 

বিকেলের মোহটান সূর্যাস্তে কাঁপে 

আদিম কন্যারা ফিরে আসে 

আবেগের স্রোতে রোজ নৌকা ভাসায় 

ধানগুলি বেবাক শুভ্র গান 

নিয়তির ফুলে ফুলে ভরে ওঠে বাগান 

একাকী নিবিড় সরু পথে 

দেখি  আমারই চতুর ভ্রম যায় 

শব্দেই আকৃষ্ট আমি 

অসমাপ্তির বৈরাগ্য উঠোন 

রোদের বিস্তার বুঝি 

আর খড় শুকিয়ে নিই 

আমার ঘরের চালে 

বিমোহিনী লতাদের অমোঘ বিস্তার 

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

একটি জন্মের বারান্দায়

একটি জন্মের বারান্দায়

     কতক্ষণ অপেক্ষা করব উদ্বেগ ?

         আর্তনাদ ছুটে আসছে 

            রক্তবনের ভেজা হলুদ চাঁদ

                নেমেছে মাটিতে 

এইখানে একটি হাতললাগা চেয়ার 

     আমাকে বসিয়ে রাখে দিনরাত

          আমি কি জরার বন্ধু ?

               মৃত্যুর সংবাদ ?

নিজস্ব মুখের দিকে চেয়ে আছি 

     বার্ধক্যের কুমারী এসে চা দেয়

         আমি তার কাঁপা কাঁপা হাতে

              ছুঁয়ে দেখি আমাদের গার্হস্থ্য বিষাদ।

horizontal line

সু ত নু  হা ল দা র

পরিচিতি: সুতনু হালদার। কবি, প্রাবন্ধিক কথাসাহিত্যিক। জন্ম ভারতবর্ষের পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলায় অবস্থিত শান্তিপুর শহরে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান বিষয়ে প্রথম শ্রেণীতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করে বর্তমানে ফুলিয়া বিদ্যামন্দির উচ্চ বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক পদে কর্মরত। লেখালেখির সূত্রপাত শৈশব থেকে হলেও সচেতনভাবে লেখালেখি প্রথম দশকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে। বর্তমানে ‘দেশ’,’কবিতাপাক্ষিক’,  ‘জিরো বাউন্ডারি’, ‘মধ্যবর্তী’, ‘বাক্’,’অন্যনিষাদ’, ‘যুগসাগ্নিক’, ‘দৈনিক বজ্রকণ্ঠ’ সহ বাংলা কবিতার বিভিন্ন মুদ্রিত ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমের পত্রিকায় তাঁর কবিতা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। কবিতা ছাড়াও তিনি গল্প ও প্রবন্ধ লেখেন। বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রে তাঁর লেখা বহু প্রবন্ধ পঠিত ও প্রকাশিত হয়েছে। যদিও কবিতাই তাঁর প্রথম প্রেম। তিনি ‘দহর’ নামক একটি ওয়েবম্যাগ সম্পাদনা করেন। 

প্রকাশিত বই: ‘চাকভাঙা চাঁদ’ (কাব্যগ্রন্থ, ২০১৮), 

‘আহ্নিকগতির কালশিটে রং’ (কাব্যগ্রন্থ, ২০১৮), 

‘অন্তঃসত্ত্বা কুয়াশারা’ (কাব্যগ্রন্থ, ২০১৯)।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ 

চাক্ষুষ

মৃত মানুষটির মুখে

আলোটা ছড়িয়ে পড়ছিল

গাছের ডাল নুইয়ে এলো

চুঁইয়ে পড়ল জল

ফুল-ফল আরো কত দমবন্ধ নিঃশ্বাস

গোটা কয়েক জোনাকি

কিছুটা বাতাস

কিছুটা ঘুম

শুধু মৃত লোকটার বাচ্চা মেয়েটা

বাবার মুখটায় জ্যোৎস্না দেখেছিল।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

খড়কুটো ও এক বিজাতীয় ফকির

(১)

নীল সালোয়ার আর ফকির ছদ্মবেশ

একসঙ্গে নদীতে মিশেছিল, এক আধারে, তবুও 

মিলন হয় নি! নদীর ঢেউ কুসুমের আচ্ছাদন চেনে না

মোলায়েম স্পর্শে দীর্ঘশ্বাস! 

উলঙ্গ ঢেউয়ে–

আলুলায়িত নদী

                           খরস্রোতা… 

খড়কুটো একটা বিজাতীয় ফকির, 

পড়ন্ত সন্ধ্যা, বৃশ্চিক লগ্ন

বহমান নদী, জল, জীবন…

(২)

চলার ইচ্ছাতেই নিরুদ্দেশের তর্জমা

বাঁধন আলগা হলে ভোরগুলো দরজা খুলে দ্যায়

পরিশ্রমী সকাল হুড়মুড়িয়ে ভেতরে ঢোকে

গেরস্থালির প্রান্তিক উপবাসে

বছরের পর বছর স্তূপাকার 

             বসে থাকে পঞ্চশর

দো আঁশলা গাম্ভীর্য

শৃঙ্গারময় অপাবৃণু

নাতিশীতোষ্ণ বর্ম

উপবৃত্তাকার কক্ষপথ জুড়ে মুখোমুখি ছায়া

horizontal line

র বি ন  ব ণি ক

সম্ভাবনা

যে মাঠে যুদ্ধ হবার কথা ছিল

সে মাঠে এখন আর কোনো নাবালক ফড়িং ছাড়তে যায় না

তারা এখন বারান্দা থেকেই উড়িয়ে দেয় যাবতীয় বিধিনিষেধ

যে মাঠে যুদ্ধ হবার কথা ছিল

সে মাঠে এখন ঘুড়ে বেড়ায় কতগুলো গতকাল, সন্দেহের চোখে,

ঘাস তাদের বড্ড অপন্দের বিষয়

তারা জানে চুলের পুষ্পে দূর্বা লেগে গেলে

যুদ্ধ কোনো সম্ভাবনার বিষয় হয়ে থাকে না

নির্দেশ মেনে একটু একটু করে কেটে রাখে গ্রামবাসীর মাথা

তারা জানে মাথা কেটে গেলে ঘাসের কোনো পরিকল্পনা থাকে না

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

গতিপথ

সে একদিন কচ্ছপের পিঠ থাপড়ে বলেছিল

আমারও পিঠে রোজ অভিমান ভাঙতে আসে নিহত মানুষের দল

আমিও রোজ তোমার মতো ভাঙন গিলে খাই-

যে জল তোমাকে কামড়ে ধরে রোজ

যে জল কামড়াতে কামড়াতে তুমিও আজীবন

আমিও সে-জলের পিঠে সন্ধ্যাবাতি জ্বালাই

আর জল আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তৈরি করে গতিপথ

আমরা জলের বিবাহের দিন খুব সেজেগুজে ছিলাম

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

ভেজা ঋতু

ঋতু ভিজে গেলে হাওয়ারা খোঁজে সেমিকোলন

একদল সমাজচ্যুত মেঘের মতো খোঁজে ফুলস্টপ

হাওয়ার অজানা “সুহাসিনীর পমেটম” এক যতিচিহ্নহীন আলো

আর্দ্র সাইকেল–আরোহীর মুঠো দেখে বুঝে নেওয়া যায়

একটা কাঁচা উনুন দিনদিন কতটা প্রস্তুত করেছে নিজেকে

একজন বিমানচালকের বুকে কতটা বাতাস ভরে নিলে

দার্শনিকের মতো খুঁজে নেয় নৌকোর প্রকৃত দূরত্ব—

horizontal line

সো ম না থ  বে নি য়া

পরিচিতি: জন্ম কলকাতায়। রসায়ন বিজ্ঞানে স্নাতক। পেশায় চাকুরিজীবী। মূলত কবিতা লেখেন। লেখালিখির সূত্রে তিনি এখন‌ও পর্যন্ত বিভিন্ন নামিদামি বাণিজ‍্যিক, অবাণিজ‍্যিক, লিটিল ম‍্যাগাজিন ইত‍্যাদিতে নিয়মিত লিখে চলেছেন। শূন‍্য দশকের কবি হলেও তার দুটি উল্লেখযোগ‍্য কবিতার ব‌ই “ব‍্যক্তিগত ধূসর” এবং “বাদাম বিস্কুট” অতিসম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। কবিতা চর্চাকে তিনি নিজের মানসিক আশ্রয় হিসেবে দেখেন যেখানে তার অনুভূতিগুলি নিজের মতো প্রশ্রয় পেয়ে লালিতপালিত হয়। শখ বলতে ব‌ই পড়া, ঘুরতে যাওয়া আর পুরস্কার বলতে পাঠকের ভালোবাসাকে বোঝেন।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

নুন-ভাত

প্রথম চিৎকার পেতে গিয়ে নাভি খুঁটে তুলেছি ব‍্যথা

প্রণয় নয়, মার্জিনে যথেষ্ট কাটাকুটি, সুলভ শূন‍্য

সুযোগ পেতে আতশকাচের তলায় রেখেছি শিরা

নির্জন শ্বাসমূলের মুখ চাপলে হাই তোলে ফুসফুস

তুলসীমঞ্চে আড়ষ্ট বিড়াল, আকাশ হাসে, তড়িৎশিখা

চৌকাঠ পেরোলে ঘোমটার ঠোঁট ভীষণ আধুনিক

পর্যায়ক্রমে বিবাদ ভুলে জানে নুন-ভাত অন্নপূর্ণা

মুখ ফিরিয়ে থাকলে বিপ্রতীপ হাওয়ায় ঘুম কারুশিল্প

চোখ খুললে স্বপ্নের সাঁকো ভাঙে, দৃষ্টি নোনাবসতি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

নৌকাচরিত

কেন পুনর্জন্ম, আড়ালে কার সমর্থন, বলো

সেকী প্রিয়, হৃদয়ের অলিন্দে বিচরণ

বুকের উপর হাত রাখলে তালুতে জলছবি

নিরন্তর নামপর্বে যেখানে দাঁড়াই, মন্দির

পাশের সরু পথ কল্পনায় বৈতরনী নদী

দেখি ভাসছে ছাই, শুকনো জন্মপরিচয়

মোহনায় জমে ধ্বস্ত প্রাণের ইত‍্যাদি কথা

চরাচরে দর্শক হাততালি দেয় মুগ্ধতায়

সঞ্চিত পলির বুক ঠেলে আসে উঁকির বিষয়

প্রকৃতির শিরায় ঘোষণা করে পুনরুত্থান

তবে কি সহবাসের ক্ষয় হয় না আগুনে

পাতা উলটে যতিচিহ্নের অভিঘাতে সংশয়

বুঝে নিতে ভাবে কোনো স্বপ্নাদেশের কথা

গাঢ় ঘুমের ক্লান্তি হাঁটার কোন পর্যায়ে আছে

মৃত‍্যুর গায়ে খোদাই থাকে নৌকাচরিত

পারাপারে কালান্তর, এই সূত্রের বিজ্ঞাপন নেই

horizontal line

চ ন্দ্র দী পা  সে ন শ র্মা

পরিচিতি: খুব পরিচিত লেখক না, পিতৃসূত্রে সাহিত্যে জড়িয়ে পড়া। পিতা পাঁচের দশকের গল্পলেখক কবি অনুবাদক সমালোচক অজয় দাশগুপ্ত। প্রথম বই : বিশ্বকাপ ফুটবল ১৯৯০। বিবাহসূত্রে দীর্ঘ প্রবাসবাস, নয়ের দশকের শেষে কবিতা লেখা শুরু, অনিমিয়ত।

কবিতার প্রথম বই : অপরাহ্ণ মন, ২০০৩, সামনে সাগর : ২০০৪(কবিতা পাক্ষিক); পথের নির্মাণ, ২০০৭(মহাপৃথিবী)। ২০০৭ এ বাবার মৃত্যুর পর দীর্ঘ বিরতি। ২০১৮

জুনে লেখায় ফেরা, প্রথম কবিতা কৃত্তিবাসে। এরপর মহাপৃথিবী কবিতা পাক্ষিক কবিতা সীমান্ত এবং বিভিন্ন ওয়েব পত্রিকায়। ২০১৯ কালীকৃষ্ণ গুহ সম্পাদিত ‘কাব্যসংগ্রহ অজয় দাশগুপ্ত’ গ্রন্থের প্রুফ দেখা ও সহযোগিতা করা। ২০১৯ জোড়াসাঁকো লিটল ম্যাগাজিন মেলায় চতুর্থ কবিতার বই প্রকাশিত হয় : ‘মন্থর মুহূর্তগুলি’ (আলোপৃথিবী)।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ 

বর্ষাকাল

বর্ষাকাল। জলগুলো ফেনিয়ে উঠছে

চোখে, মূলাধার চক্রে।

স্খলিত সঙ্গমের সোহিনীপথ পেরিয়ে

সূর্য জাগছে আরো একটি আয়ুদিনের কামনাসিক্ত

জমা জল ঘূর্ণি তুলছে, শুনশান রাস্তায়

নদীটি শরীর পরিক্রমা সেরে সান্ধ্যভ্রমণে–

দুরকম জলের সঙ্গম। হাতে গোনা পথচারী

শহুরে দেয়ালে পোকামাকড় ছোট বড়ো শামুক।

বর্ষাকাল। অধীর আগ্রহ।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

করজোড়ে

একটি কবিতা শেষ হলে নতজানু হই করজোড়ে

কুয়াশা নেমে আসে দুচোখে। নাচের মুদ্রায়

প্রসারিত করি করতল, প্রজ্ঞার আলোয়

শব্দের শরীর, শরীরের শব্দ নেচে ওঠে ছন্দে

বাজতে থাকে, বাজতে থাকে দীর্ঘপথ

সম্ভাবনাময় অন্য একটি কবিতা–

প্রস্ফুটিত রাতের ব্রহ্মকমল…

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

চোখ

ছাপ রইলো না

মুছে গেছে, যাচ্ছে–

অপলক ওই চোখ সত্য বলেছিল

তা কি মুছে যাবে?

ওটুকুই ধরে রাখা আনন্দে কান্নায়

সত্যাসত্য ভাবতে ভাবতে

হাঁটতে থাকে দূরের হাইওয়ে

তার গাছ পাখি বৃষ্টি কবিতার চিত্রকল্প

সরে সরে যায় ট্রেনজার্নির দৃশ্যের মতো।

শূন্য ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে একা, আর ওই চোখ…

horizontal line

সু লে খা  স র কা র

তট

যৌবন ছিঁড়ে গেলে

যত্নে রেখো বয়স।  

_ _ _ _ _ _ 

অথৈ পান্তা

গল্প ও কথারা শরীর হয়ে গেলে 

বৃষ্টি নামে পাখির বাসায়। 

অস্থির হয়ে ওঠে নদী চোখ। 

বিস্ময় পান করি ক্লান্তি ভুলে যেতে। 

সময়ে যে কুয়াশা জমে ছিল  

তা আরও সাদা হয়ে এজন্মের শরীরে ঢাকে 

আবার শরীর পাল্টে খালি গা হই। 

পান্তা খাওয়া ঈশ্বরেরা ভিড় করে। 

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

অশরীরী কলম

যে কলমের কথা তুমি বলছো 

তার একটা মন আছে। 

একটা কৃষ্ণচূড়া, 

একটা মেঘ মগ্ন দিন, 

একটি দুঃখ। 

সে দুঃখের নাম জানো না তুমি। 

ফোঁটা বৃষ্টি। বৃষ্টির একটি কলম। 

সে কলমের বুক চিরে দেখেছো কখনো  

অনায়াসে মৃতকান্না পায়চারি করে 

ভারতীয় বিছানায়! 

বিকেলের বিবর্তনে চাঁদ হেসে ওঠে। 

ক্রমাগত পেয়ালায় ফুরিয়ে যায় চা। 

ঠিক তখন, দীর্ঘ প্রলাপে অশরীরি হয়ে উঠি। 

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ পালঙ্ক

যে পালঙ্কে রানী শুয়েছিল যৌন দোষে। 

সে পালঙ্কের কথা তেমনভাবে জানা হয়নি কারও। 

মিউজিয়ামে সংরক্ষিত সেই অভিশপ্ত  

ফলিডলের শিশি এবং পার্কিনসনস ডিজিজ। 

একবার খুব মগ্নতায় রানী হবো বলে  

মুসলিম তলোয়ারী কারুকাজ শিখেছিলাম সন্ধ্যা ঈদে। 

বিলাসী আচরণে গ্রাম্য রমণী যেন সরষেতেল মাখা। 

রমণ শেষে উঠে এসেছিল রোদ,  

লিবারেল হৃদপিণ্ড। আমিও পিছে পিছে। 

মহাশূন্যের মতো দুঃখ নিয়ে দরিদ্র হয়েছি। 

দুঃখের ভেতর চলচ্চিত্র। 

দৃশ্য তৈরি হচ্ছে। 

ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছি গোলাপ ভরা বিছানায়।  

পালঙ্কে…

horizontal line

উ ত্ত ম  চৌ ধু রী

বসন্তে প্রতিবেদন 

বিশ্বাস হয় না 

আমি ও আমার ছায়া নেই।

এ যাবৎ একটি বিন্দুকেই

ধ্রুব সত্য জানি,

আর তার মুখখানি

কুয়াশা ছাড়িয়ে নম্র আলো।

যে গেছে নদীর কাছে, 

মুগ্ধ বসন্তের কাছে –

তার আছে পূর্বাপর স্মৃতি।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

দ্বিচারিতা

বীজের লালিত কথা জানি, 

এও জানি আড়ালে আড়ালে 

বেড়ে চলে প্রিয়মুখ এক।

আমাদের প্রতিটি জীবনে 

এই দ্যাখ্ কত দ্বিচারিতা,

উড়ো কথা আর উপকথা

আলাদা আলাদা ঘর বোনে।

তারপর ভাঙ্গে ফুলদানি, 

আহ্লাদি ঘর ভাসে জলে;

ক্ষয়ে যায় প্রিয় শিলালেখ।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ নৌকাগুলো সব

সমস্ত নদীর শেষে 

একটি একটি করে ভেসে ওঠে 

নৌকাগুলো সব।

মাঝিহীন, ছইহীন।

একটি একটি করে নৌকাগুলো সব

ভেসে যাচ্ছে অনঙ্গের দিকে।

আমাকে অনেক দেহে

তুলে নিয়ে নৌকাগুলো সব

ছুটে যাচ্ছে স্বপ্নের ভেতর।

horizontal line

সু ম ন  ম ল্লি ক

পরিচিতি : সুমন মল্লিকের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে ৷ বর্তমানে শিলিগুড়ি নিবাসী ৷ পেশায় স্কুল শিক্ষক ৷

তার প্রকাশিত কবিতার বইগুলি হ’ল : 

আর্দ্র নিশাত (২০১৫), মনকেমনের হাউল (২০১৫), অগ্নিগোলাপ ও শাশ্বত ক্যাটাসট্রফি (২০১৭), মাধুরীপ্রসব (২০১৮), শল্য কিংবা বিশল্যকরণী (২০১৮), প্রলাপসিন্ধু (২০২০) 

প্রাক্তন সম্পাদক : উত্তরের কবিমন পত্রিকা

বর্তমান সম্পাদক : শিলিগুড়ি জংশন পত্রিকা

সম্পাদনা করছেন উত্তরবঙ্গের সাতটি জেলার পৃথক পৃথক কবিতা সংকলন

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

অচৈতন্য হই

ঠোঁটের কোণে লুকিয়ে আছে যে অন্তরঙ্গ সাঁকো 

গরমের এই দাবদাহে তাতে সটান উঠে পড়ি ৷

গলে যাওয়া পিচের রাস্তায় কুয়াশা নেমে আসে,

শুকিয়ে যাওয়া নদীতে ফিরে আসে হিমজল ৷

তারপর আচমকা চোখ বুজে আঙুল বুলিয়ে দিই

স্মৃতি ও স্বপ্নের মিলনস্থলে ৷

জেগে ওঠে দেবীমুখ – কার ? কার সেই মুখ ?

এই একটি প্রশ্নের ভেতর আমি অচৈতন্য হই ৷

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

চিরায়ত অভিশাপ

নিদ্রাহীনতা এখন অভ্যেস হয়ে গেছে ৷

মধ্যরাতে মৃদু বাতাসের সাথে

ভেসে আসে যে কদমফুলের সুবাস,

তার ভেতর আজও খোলস ছাড়ে

                        ভালোবাসা ৷

দেখতে দেখতে পাথর হই,

দেখতে দেখতে কাতর হই,

দেখতে দেখতে জ্বলে উঠি অসীম আগুনে ৷

অবশেষে আমি তোমার শরণাগত হই – 

তুমি হাসতে হাসতে

        হাসতে হাসতে

               ক্রমশ সরে যেতে থাকো ৷

এই সরে যাওয়াই তো চিরায়ত অভিশাপ ৷

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

প্রতিরাতে এভাবেই 

জ্যোৎস্না রাতের বাসভাসি থেকে কিছুটা অশান্তি

তুলে রাখি রাত সাড়ে এগারোটার চোখভর্তি উথালপাথালে ৷

ঋতুচক্রে কেটে কেটে যায় সময় আর এই দেহটিও

কেটে কেটে যায় স্মরণে, যার ডোর কিছুটা ছিঁড়ে গেছে,

বাকিটা ফুলের মালার মতো জড়িয়ে আছে তোমার দু’হাতে ৷

প্রতিরাতে এভাবেই একাধারে প্রেমের জন্ম ও মৃত্যু ঘটে যায় ৷

horizontal line

বি র থ  চ ন্দ্র  ম ণ্ড ল

কবি পরিচিতি: বিরথ চন্দ্র মণ্ডল। জন্ম ২৯ শে নভেম্বর  ১৯৭৪। গ্রাম -চেঁচুড়া পুট। ডাক – বকশিস  পুর। জেলা – পূর্ব মেদিনীপুর। বর্তমানে কবি কাঁথি  শহরের বাসিন্দা। খুব ছোট বেলা থেকে কবিতা এবং ছোট  গল্প  লেখার  আগ্রহী। পশ্চিম বাংলার অসংখ্য নামী পত্রিকায় লিখে চলেছেন এখনো।

সম্পাদক – আশাবরী সাহিত্য পত্রিকা।

পেশা – শিক্ষকতা।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

ঝাউ  পাতা  এবং আমাদের  সংসার 

ঝাউ পাতা  , তোমার সংসার -বৃত্তে 

কেয়া  আর নোনার সূচারু একান্নবর্তীকা। 

তোমার চোখের সামনে রাত্রি যেন সমৃদ্ধ টেরাকোটার প্রচ্ছদ মাদুলী। 

এমন বন্ধন বৃত্ত কোন সুত্রে পাওয়া আমার জানা নেই। 

আজ এই অন্ধকারে এসো  –

জারিত হতে চাই ঋজু উচ্চারণে  ।

ঝাউ পাতা, তুমি গান শোনো

চিরায়ত নির্লিপ্ত  সুর- সমুদ্রের  রাত্রি-ইমন।

চলে এসো একটু খানি হেঁটে, মোরামের ধ্রুপদী নৃত্য অবশ্য দেখনি এমন  !

দেখবে এসো ; রাস্তা নাচছে, 

নাচছে পাশাপাশি ঘর। 

ঘরের বাসন-কোষন নিয়মিত নিয়ম ভাঙছে, 

মানুষের মন ভাঙছে, 

বুক ভাঙছে  প্রহর  প্রহর  !

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

ভাঙন বৃত্তান্ত

নদীর ভাঙন দেখেছি, 

দ্যাখো -জল শ্রোত ক্রমশ নতুন ঠিকানায়। 

শ্রোত কখনো নিয়ম ভাঙে না 

এবং কার কী এলো গ্যালো পরোয়া করেনা। 

আমি নদীর ভাঙন দেখেছি 

জীবনভর আগলে রাখা সংসার জলে ডুবে যায়। 

তোমার ভাঙন দেখছি ইদানিং……. 

তোমার ভাঙনে কোনো শ্রোত নেই, ঢেউ নেই। 

এ যেন তুষের আগুন……….. 

সন্তর্পণ, ধীর প্রদাহ আর অহরহ রক্তক্ষরণ  ।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

রাজনীতিক  

তোমার প্রকাশ দেখি শুন্যতায়….. 

অথচ স্থবির থাকো –

নিষ্পেষিত বিপন্ন সময়ে ! বাতাসে পোড়ার ক্রমাগত  ….. 

ঝলসে যাচ্ছে মুখ। 

মুখোশের  অট্ট হাসি…… 

মুখোশের  মত্ত  অণুষ্টপ………!

horizontal line

অ ঞ্জ ন  দা স

মাটিতেই বাড়ছো দুপুর

শস্য মাঠের প্রজাপতি সকাল ভেঙেছিল ফুলে

নত সম্ভাষণে ডেকেছিল মন্দির প্রদীপ

হারানো  নূপুরে কিছু কথা থেকে গেছে

মাটিতেই বাড়ছো দুপুর

নিকানো নিক্কন দৃষ্টি অভিধান-

তুমি এসো যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল শব্দহীন

শব্দফুলে পূজো করি তাহার উঠোন

অরণ্য গভীর যদি আমাকে যক্ষ করো

অতল দিঘির হিরেজল

ডুবে থাকি অপদস্থ নেশা

শব্দাহত গ্রামীণ আকাশে পেশাদার ঝড়

হয়তো উপড়ে নাও গাছের সংস্কৃতি

তবু

চূড়ো থেকে ছায়া  ছেপে রাখো

আমার গোপন পাঠের প্রিয় চিঠি 

চিঠির উপরে

লেদফুল ঈশ্বরী জানে  জানে না মন্দির

                          মাটিতেই বড় হয় আমার দুপুর

তোমার নূপুর আর আমার এ শব্দজন্ম 

প্রতিপল পালনীয় দিন

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

কাঁচ ভেঙে রোজ

জল কোনে তুই শোভার চোখে চোখ হারালি

ফুল শালুকের মাথায় বাঁধি নিরোগ সকাল   

পাড়ের হরিন কাঁচ ভেঁঙে রোজ জলেই ডোবে

জল ভাঙেনা  বুকের ভেতর হাঁটছে কাঁপন

এক কোণে তুই ছক্কা পড়িস লুডোর গুটি

কুট মেরে কৃষ দান জিতেছিস মহাভারত  

একশো ছক্কা মাঠের ভেতর মা ডুবে যায়  

চূড়ান্ত ভ্রম ছাপার ভেতর জল রাখা নেই

ঝির বাতাসে স্পষ্ট  ছায়া ভাঙতে থাকে

জল আশয়ের আয়না দ্বারের হুক খুলেছি 

বকুল গায়ে হলুদ পাখির রোদ উঠেছে

সব ভেঙেযায় হৃদ খুলে গায় রাধেয় দুপুর  

horizontal line

পি ন্টু  পা ল

মুসাফির 

১.

আলো আসে, মাখায়।

ব্যারিকেড ভাঙে : এক, দুই, তিন…

ক্রমশ কান্না জমে 

এগোতে এগোতে   

পুরানো পাথরের গায়ে 

শ্যাওলা জড়িয়ে ধরে আবেগ  

২.

অভিমানী সোহাগ আর প্রেমকণা

বিলাপ চোখে আকাশের  দিকে তাকায়

বিছানায় লালে ভেজা গোলাপের ছাপ।

 দুই বালিশ- মাখামাখি, মুখোমুখি।

ভিতরে উদোম গরম, বাইরে কনকনে শীত 

৩.

ধূসর আকাশের নীচে

সাদা হাঁসগুলো জল ছেড়ে ডাঙায় ওঠে

একলা পালক 

বাতাসের সখ্যতা মেখে 

চেয়ে দ্যাখে 

শূন্য আকাশের তারা 

একটা নক্ষত্র জেগে থাকে

একটা ফকির পৃথিবীর বুক চিরে গান বাঁধে –

“ও পরাণ পাখি

এ  খাঁচা ছেড়ে কোথায় যাবি… “

৪.

জাহাজ অথবা চতুরাশ্রম 

 আশা আছে , তাই আসা আছে 

একা এক মুসাফির হেঁটে যায় অন্ধকারে

horizontal line

জা তি স্ম র

গুচ্ছকবিতা

১.

এত গভীর

এত গভীর কেন প্রতিটি অক্ষর

যেন কালো প্রাচীন খাদে

পড়ে যাব ততোধিক প্রাচীন আমরা

২.

প্রতি রাত্রেই পেনের নিবে

হত্যা করছি একটি ময়ূর

প্রতি রাত্রেই হেরে যাচ্ছি

পেখমের কাছে

৩.

কোনো বই তর্জমা করবো না

এদিকের জানলা বন্ধ করে দিয়েছি

ওদিকের জানলা ভেঙে 

এগিয়ে আসছে কথাকার, প্রাবন্ধিকরা

৪.

আড়ালে বসে রয়েছে কদাকার গদ্য

আমি রোজ তিলের খোঁজ করি

আমি খোঁজ করি রোজ নুনের

৫.

পিপুল গাছের গায়ে টাঙিয়েছি

অশ্রুজাত সম্পর্কগুলি

কবিতাগুলির পাতা ছিঁড়ি না

আগুনে ধরাই রাতে

অশ্রু উবে যায়horizontal line

সৌ র ভ  ব র্ধ ন

বিরামহীন 

৭.

হাত কেঁপে উঠতে পারে শুষ্কতা দেখে

নিঃশ্বাস ঘেমে যেতে পারে নৈরাশ্যে –

উজ্জ্বল স্বপ্নের আক্রমণে তবু জেগে ওঠো জীবন

আবর্জনা স্তূপ হয়ে থাক অদৃষ্টে

আমাদের প্রাচীন পিতার রূপ খেয়ে আছে পাথর

ওকে আলিঙ্গন, ওকে অভিবাদন, 

― ওকে ধরম কাঁটার আদল

৮.

এখন সোমরস তুলে আনো, 

শরীরের বর্ম ঢাকুক আস্তিক ফাতনায়

নারীমুখ অবান্তর ধ্যানে মগ্ন, 

মহিলা কামরায় রামধনু ওঠো এবার

পুরনো নাব্যতা নিয়ে গাছের শরীরে 

বৃক্ষ বদল করো প্রিয়

৯.

মরসুমের দীর্ঘতম ঘুমে 

আমি তোমার গর্ভ চুষেছি

সূক্ষ্ম চুম্বনে অসংখ্য ঝরঝর 

ভেঙে পড়েছে একা

সুযোগ পেতে বসে আছি এখন, 

ক্ষয়ে যাচ্ছে নিতম্বগুটি

প্রবাদপ্রতিম শ্লথে দ্রুত সেজে উঠছে 

অকিঞ্চিৎ পাড়, স্বস্তির থেকে ছুটে আসছে 

সমতল রোদের মিহিমুঠো বুক 

১০.

হারিয়ে যাওয়ার পর তোমাকে এমন বিচ্ছিন্ন লাগে

মনে হয় অজস্র দাগ যেন ধাপ্পার সাহচর্যে বেড়ে উঠছে

তাকে চিহ্নিত করা যায় যদিও

আলিঙ্গন করা বন্ধুর হয়ে পড়ে।

তবু শোক আসে —- নাইতে নাইতে শরীর 

জিওল হয়ে ওঠে মানুষ; স্রেফ পৌষের জিজিবিষায়

দ্যাখো, আমিও দাঁড়িয়ে দুহাত… 

horizontal line

শু ভে ন্দু  ঘো ড়া ই  ( স্ব প্ন নী ল )

পরিচিতি: অক্টোবর ১০,১৯৭৪ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা থানার সিতিবিন্দা গ্ৰামে জন্ম। কলকাতার আশুতোষ কলেজে ১৯৯৬ সালে ডোয়েকে কম্পিউটার নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও অর্থের অভাবে মাঝপথেই ইতি পড়ে। এরপর ১৯৯৯ সালে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ। পরে টিউশন পড়ানোর পাশাপাশি নতুন করে ইংরেজী বিষয়ে স্নাতকে ভর্ত্তি।

লেখালিখি- মরশুমি, কবিতা আশ্রম, জন্মভূমি, টার্মিনাস, কৃশানু প্রভৃতি পত্রিকায়।

প্রকাশিত ব‌ই নেই।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

প্রতিবিম্ব

ক্যালেণ্ডারটি ঝুলছে। ঝুলতে দাও।অযথা নামিও না।

অনেকেরই জন্মতারিখ লেখা আছে ওতে

সময় হলে অমনই নামিয়ে দেবে দেওয়াল

অযথা কারণে দেওয়াল কোনকিছুই নিজের করে রাখেনা

সে দেওয়ালের পেরেকও জানে;এমনকি জানে ক্যালেণ্ডারের সুতোটুকুও।

তারচেয়ে মনের ধুলোময়লা গুলো সাফ রেখো

অযথা কারণে বারবার তারিখের দিকে চোখ রাখলে ভয় আর আতঙ্কই গ্রাস করে কেবল

‘দেওয়াল কখনো মৃত্যুকে আগলে রাখেনা!

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

চলো ভেতরে যাই

যেহেতু দরজা খোলাই আছে চলো একবার ভেতরে যাই।প্রাণে প্রাণে কথা বলি।

এভাবে কথা বললে নিজের ভেতরে একটা ভালো লাগা আসে

ভেতরে ভেতরে অপূর্ব জল তরঙ্গ বেজে ওঠে যেন।

ঢেউয়ে ঢেউয়ে ঢেউ বাজলে ভেতরে যেন একটা অদ্ভুত মাধুর্য্য তৈরী হয়।

শব্দের গভীরে যে আরো অনেক গভীর শব্দ,

কথার গভীরে যে আরো অনেক গভীর কথা মগ্ন হয়ে জেগে থাকে সেসব কথা শুনতে পাই।

ভেতরে যাওয়ার প্রকল্পটি এতো সুন্দর

যেন কয়েকটি সিঁড়ির ধাপ পরপর সাজানো আছে মন্দিরে যাওয়ার..

পা ফেললেই যেন শুনতে পাচ্ছি

দরজা খোলা আছে

গান হয়ে হয়ে ভেতরে এসো

সেতার অমনিই ছুঁয়ে আছে মাধুরী।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

জীবন একটি পূর্ণবাচক সংখ্যা

উনুন ঢালো

আগুন ওমনিই গড়িয়ে যাবে

জ্বলে ওঠা তো ধর্ম।

ধর্ম—–

নিভে যাওয়া পর্যন্ত একটি বিরতী বিহীন পর্যায়

ছাই তারই অন্তিম পর্ব।

ছাই—–

সাদার অণুবীক্ষণ রূপ।সুক্ষাতিসুক্ষ।

কতকগুলি শূণ্য অঙ্কের বিয়োগফল।

শূণ্য শূণ্য

বিয়োগ করলে ফলাফল সময়ে এক হয়।এক তো ধ্রূবক।

একটি পূর্ণবাচক সংখ্যা

horizontal line

স ন্দী প ন  দা স

কবি পরিচিতি: জন্ম-১০ই মে, ১৯৯৩

জন্মস্থান: বনগাঁ জীবনরতন ধর মহাকুমা হাসপাতাল।

প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়- ‘বনলতা’ সাহিত্য পত্রিকায় ক্লাস নাইনে পড়ার সময় ১৪ বছর বয়সে বনগাঁ থেকে।

এখনও পর্যন্ত কোনো কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। তবে প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিতব্য- বনলতা পত্রিকা ও প্রকাশন।

সম্পাদক: ‘বিবেকের আলোকে’ সাহিত্যপত্র।

অজস্র পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি চলছে।

প্রিয় কবি: জীবনানন্দ দাশ

ভালোবাসেন: পাহাড়, সমুদ্র।

শখ: পুরোনো চিঠি পড়া।

ইংরেজি ভাষায় স্নাতকোত্তর। বর্তমানে বি.এড.পাঠরত।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ ক্যামোফ্লেজ

বৃষ্টি ছুঁতে পারেনি বলে যে মেয়েটি মনখারাপ করে

বসে থাকে নদীর তীরে

ঢেউ এর গায়ে লিখে রাখা অসংখ্য নামগুলো তার দোসর…

একটা সাঁকোর ভেতর কতগুলো আকাশ থাকে

একজন পরবাসীর ভেতর কতগুলো রং লুকিয়ে থাকে

লাইমলাইট জানে?

একটা ঝলসে যাওয়া বিকেলবেলা জানে…

কাঁপতে কাঁপতে আর হোঁচট খেতে খেতে কখন একটুকরো আলো রাতের দিকে গড়িয়ে যায়,জানো?

হরবোলা ঘড়ি জানে…

তুমি শুধু জানো না মুঠো মুঠো অভিমান আর ফুল নিয়ে

শহরের ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়ালে আমার মতো আর একটা অর্জুন বিষাক্ত তির নিয়ে অপেক্ষা করবে জানলার কাঁচের আড়ালে… মুখোশের আড়ালে…মায়ার আড়ালে…

আগুন ছুঁতে পারেনি বলে যে দলছুট পাখিটি মনখারাপ করে বারবার উড়ে যায় ঐ দূর দিগন্তে

এ কবিতা,এই পথের নাম, বন্ধুরাও তার দোসর…

একটা আয়নার ভেতর কতগুলো ঘর থাকে

অবেলার ঘুমের আড়ালে কত ভাঙা টেলিফোন

আকাশছোঁয়া বাড়িরও কত আবদার…

পাঠক?…

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

ফটোসিন্থেসিস

পাশাপাশি হাত রেখে যারা পথ হেঁটে যায়

তাদের জামার কলার আর শাড়ির গোপন ভাঁজে লুকানো থাকে সন্ধ্যাতারা,কালপুরুষ কিংবা লুব্ধক…

আমি দূর থেকে ওদের দেখি… আলো ছুঁতে গিয়ে ওদের দেখি…

তারপর একসময় ওরা জামার কলার আর শাড়ির গোপন ভাঁজ থেকে নেমে আসে, নেমে এসে চুপিচুপি আমার সাথে পথ হাঁটে… তারপর…

তারপর একসময় আমাকে পিছনে ফেলে ওরা সন্তর্পণে

উঠে যেতে থাকে আকাশের গায়…

আমি ওদের যাওয়াটুকু দেখি…

অতঃপর শহর ঘুমোলে হ্যাঙ্গারে ঝুলতে থাকা ঐ জামার কলার, এলোমেলো শাড়ির ভাঁজ মুখ লুকিয়ে কাঁদে

কাঁদতে কাঁদতে রাত হয়ে নেমে পড়ে রাজপথে…

আমি আবারও পথ হাঁটতে হাঁটতে দেখি কিভাবে নিয়ন আলোর আড়ালে নীরবে অশ্রু মুছে ওরা হয়ে ওঠে একে একে পাতার খিদে, জলের অতল, স্তেপ জলবায়ু অঞ্চল…

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

অনিত্র

অল্প আলো দিয়ে নতুন পাতায় নিজের নাম লিখে গ্যাছে

গহীন বাতাস

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আমরা দাঁড়িয়ে দেখেছি ক্রমশ একা… খুব একা হয়ে আসা কামিনী ফুল, বুড়ো ল্যাম্পপোস্ট, কখনও আলো ছুঁতে চাওয়া একটা নীরব পথ…

আমি আর শুভায়ন…

দেখেছি কিভাবে আমাদের চোখের পলকে বদলে গ্যাছে আলোর সব রং

দেখেছি কিভাবে একটা জেদী ঘোড়া আমাদের মারতে গিয়ে আহত হয়ে বেলাশেষে হাঁটু মুড়ে বসে গ্যাছে ঝোপঝাড়ের আড়ালে…

তবু আমরা পথ চলেছি, চলতে চলতে দেখেছি ক্যাম্পাসের বড় বড় বিল্ডিং এর আড়ালে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে আত্মঘাতী হওয়া পাখি, জোনাকি,সন্ধেমণি ফুল আর অশান্ত আগুনকে…

সন্ধেও বুঝি আড়ালে জমিয়েছে অনেক ছুরি, তবু আমরা গোপন ব্যথা দিয়ে সন্ধের বুকে লিখে গ্যাছি অনেক শতাব্দী আগে অন্ধ নাবিকের অসমাপ্ত সমুদ্রের সমাপ্ত বিজয়কাহিনী… দূর সীমান্ত তা দেখেছে,দেখেছে দূরদেশের নদী,চোখ বোঁজা ঈশ্বরও…

আমরাও চোখ বুঁজতে বুঁজতে…

তারপর কোনো এক সকালে ঘুম ভেঙে আমরা দেখি

আমাদের দু’জনার হাতে চকচকে ছুরি,যার ডগা থেকে 

টুপটাপ করে ঝরে পড়ছে আলোর কান্না, অন্ধকারের অভিমান আর অন্ধ নাবিকের অশ্রু…

চোখ ডলতে ডলতে আমরা দেখেছি আমাদের দিকে তীব্রভাবে ছুটে আসছে কখনও আত্মঘাতী হওয়া ঐ পাখি, জোনাকি, সন্ধেমণি ফুল, অশান্ত আগুন…

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই  ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে আমরা

অনর্গল বমি করছি আর পরস্পর দেখছি ক্রমশ একা …

খুব একা হয়ে আসা আমাদের দুই বন্ধুকে…

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _

কথন

মাঝেমাঝে খুব অভিমান হয় তোমার যখন একটা রোদেলা সকাল তোমায় বারবার লুকোচুরি খেলায় হারিয়ে দ্যায় আর প্রথাগতভাবে তোমার পৃথিবীকে দু’-তিনটে পলাশ বানিয়ে পিছন ফিরে মুচকি হেসে চলে যায় উদ্ধত সম্রাট আওরঙ্গজেবের মতো… তুমি কাফের! কাফের! বলতে বলতে ছুটে যাও প্রাচীন জলাশয়ের কাছে যেখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকে একটা অসমাপ্ত যুদ্ধ,একটা মনখারাপের বিকেল… তুমি জলাশয়ে ঝুঁকে পড়ো নিজের মুখ দেখার জন্য, দেখতে পাও না…তার বদলে দেখতে পাও সাম্যবাদের সবুজ রঙ,মুখ থুবড়ে পড়া একটা অন্ধ পাখির সঙ্গম…তাই দেখে পথ ভুল করে ফ্যালে সমস্ত শিকার, সমস্ত আততায়ী… তোমার আরও মনখারাপ হয়ে যায়… তোমাকে টার্গেটে রেখে কাঁধে ন্যাপস্যাক ঝুলিয়ে অদূরে অপেক্ষা করেন মানুষবেশী ঈশ্বর। পথের সাথে মিশে থাকা লাল, নীল, সবুজ-সব রঙেরও অভিমান হয়,ওরা জলাশয়ের দিকে এগিয়ে যেতে চায় শব্দ ছুঁড়ে দিতে… ছুঁড়ে দিতে সঙ্গমলোভী সব যুদ্ধদেরও… তোমার সব গুলিয়ে যায়… তুমি আবার শুন্য থেকে শুরু করতে চাও… শুরু করতে চাও পানিপথের প্রথম যুদ্ধ থেকে…আর ঠিক তখনই কাফের! কাফের! বলতে বলতে ছুটে আসেন অদূরে অপেক্ষা করা মানুষবেশী ঈশ্বর… আবারও তোমার সবকিছু গুলিয়ে যায়… চোখের দৃষ্টি ব্লার হয়ে যায়। মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ইসকাবনের গোলাম,বিবি, সাহেবের কর্পোল অস্থিরতা… তুমি ভয়ে চোখ বুঁজে ফেলো… মনে মনে ভাবো এবারও যুদ্ধ জেতা হলো না তোমার… আবারও অভিমান হলো তোমার… নিয়ন আলোর রাত তোমায় আরো একবার লুকোচুরি খেলায় হারিয়ে দিল আর তোমার গোলাম,বিবি, সাহেবদের অভিমানের বাংলা ভাষা বানিয়ে পিছন ফিরে মুচকি হেসে চলে গ্যালো উদ্ধত মোঘল সম্রাট বাবরের মতো… তোমার বুঝি এখন কান্না পাচ্ছে খুব?…

horizontal line
horizontal line

             ব্য তি রে ক ।। ১৩ তম বর্ষ 

     অনলাইন ২য় সংখ্যা ।। ১৫ই আগষ্ট, ২০২০

              সম্পাদক : শুভদীপ মাইতি।  horizontal line

horizontal line

Leave a comment

Design a site like this with WordPress.com
Get started